Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
পাথরাইল, আশ্রয়ণ, আজিমনগর
ছবি
ডাউনলোড

ভাঙ্গা উপজেলাধীন আজিমনগর ইউনিয়নের পাতরাইল গ্রামে বাবা, মা ও চার ভাই বোনসহ ছয় সদস্যের পরিবার ছিল হালিমা বেগমের (২৫), ০১৭৭৬৩৭৭২২৪; । কাঠ মিস্ত্রী  বাবার স্বল্প আয়ে ছয় সদস্যের পরিবারের ভরণ পোষণের পাশাপাশি সন্তানদের লেখা পড়ার খরচ জোগাড় করা ছিল অসম্ভব। এক সময় খরচ কমাতে পরিবারের সিদ্ধান্তে 7ম শ্রেণিতে পড়ুয়া হালিমা বিয়ে করেন একই ইউনিয়নের দোলকুন্ডি গ্রামের রাজমিস্ত্রী মোঃ নান্নু  শেখকে। বিয়ের পর হাতের মেহেদীর রঙ শুকানোর আগেই হালিমা জানতে পারেন তার স্বামীর নিজস্ব  কোন বাড়ীঘর নাই। যে ঘরটিতে তিনি নতুন বউ হিসেবে এসেছেন তাও পরের। হালিমা বাবার বাড়ীর দুঃখ কষ্ট ভুলতে এসে যখন দেখলেন ভিটেমাটিহীন এক পরিবারের পুত্র বধু হয়েছেন, তখন তার সকল স্বপ্ন বেলুয়াড়ি চুরির মতো ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। নানা দুঃচিন্তা যখন তার মাথায় ঘুরপাক খায় তখন তার পরিবারের নতুন সদস্য হিসেবে আগমন করে প্রথম পুত্র। নুন আনতে যার পান্তা ফুরায় তারপরও আবার শিশু পুত্রের  খরচ তাকে ঘোর অন্ধকারে ফেলে দেয়। খাবার পানি সংগ্রহ, টয়লেট ব্যবহার, শিশু পুত্রের দিন-রাত কান্না কাটি বাড়ীর মালিকের কাছে অস্বস্থির পরিবার হিসেবে পরিগণ্য হয়। বাড়ীর মালিক মুখে কিছু না বললে ও আচরণে অনেক না বলা কথা প্রকাশ পেত। একে একে 06 (ছয়) বছর এভাবে পার করার পর হালিমার সংসারে আবার এক অতিথী 2য় পুত্রের আগমন ঘটলো। 04 (চার) সদস্যের পরিবার নিয়ে পরের বাড়ীতে এভাই কাটতে থাকে হালিমার। নানা দুশ্চিন্তা আর হতাশার মধ্যে যখন দিনাতিপাত করার সময় হালিমার আশ্রয় হয় প্রথম পর্যায়ে নির্মিত আজিমনগর ইউনিয়নের পাতরাইল আশ্রয়ণ প্রকল্পের সেমিপাকা গৃহে। দুই শতাংশ জমিসহ ঘরের মালিক হওয়ার পর হালিমার দুচোখে স্বপ্নের ছায় নেমে আসে।


কুড়িয়ে পাওয়া একটি  বেগুন গাছ গৃহের পাশে  রোপনের পর তার স্বপ্ন  দেখা শুরু হয়। এরই ধারা বাহিকতায় সে শিম, লাউ ও টমেটো গাছ  রোপন করে পরিবারের চাহিদার পাশাপাশি বাজারেও বিক্রি করে। সবজি গাছগুলো তাকে শুধু সবজিই দেয়নি তার গৃহের  সৌন্দর্য ও বৃদ্ধি করেছে।   

2020 হালিমার ভাগ্যাকাশে উদিত হয় নতুন সূর্য। প্রতিটি সকাল হালিমাকে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে। সেই স্বপ্নগুলো বাস্তাবে পরিনত করতে তার একমাত্র পুঁজি হলো দর্জি প্রশিক্ষণ গ্রহণ। এই প্রশিক্ষণকে  কাজে লাগাতে স্বামীর সহযোগিতায় একটি  সেলাই  মেশিন ক্রয় করে দর্জির কাজ শুরু করেন। শুরুর দিকে কাজ কম থাকলেও অল্প সময়ের মধ্যেই তার কাজ বাড়তে শুরু করে। এখন প্রতিদিন 200/300 টাকা আয়ের পাশাপাশি অন্যদেরও  সেলাই প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।    

এরপর হালিমার স্বপ্নগুলো আরো দৃঢ হতে শুরু হয়। তার ইচ্ছা জাগে একটি গরু পালনের। 10,000/- (দশ হাজার) টাকায় ক্রয় করা একটি লাল রঙের ষাঢ় আজ তাকে লাখ টাকার স্বপ্ন  দেখাচ্ছে। কতদিন পর ষাঢ়টি বিক্রি করা হবে জানতে চাইলে হালিমার  দু’চোখ অশ্রু সিক্ত হয়ে ওঠে। হালিমা জানায় আদরের এ ষাঢ়টি বিক্রি করতে হবে ভাবতেই আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ষাঢ়টি  যে আমার সন্তানের মতোই আদরের তা ও (ষাঢ়টি) নিজেও বুঝতে পারে।   

নশ্বর এ সংসার রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হয়ে মানুষ চায় স্বপ্নের পাখায় ভর করে সামান্য এ জীবনতরী পার করতে। হালিমার স্বপ্নগুলোও আজ রঙিন থেকে আরো রঙিন হয়ে উঠছে। বড় ছেলে 6ষ্ঠ  শ্রেণিতে, ছোট  ছেলে শিশু  শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে।  ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বির্নিমানে আজ সে স্বপ্নবাজ মা হয়ে উঠেছে। তার গৃহে আজ  শোভা পাচ্ছে রঙিন টিভি, খাটসহ অন্যান আসবাবপত্র। বাসায় টিভিতে যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদেয় মুজিববর্ষের গৃহে বসবাসকারী মানুষদের  দেখায় তখন  সে মনে মনে ভাবে আমিও এই গর্বিত পরিবারের সদস্য। 


মুজিববর্ষে দুই শতাংশ জমিসহ  একটি সেমিপাকা গৃহ উপহার পাওয়ায় তার অভিব্যক্তি জানতে চাইলে  সে জানায়, “মুজিব বর্ষের গৃহে থাকি বলতেই সারা বাংলা আমাকে চিনতে পারে এটাই আমার বড় পরিচয়, আমি গর্বিত”।